লক্ষ্মী পূজা ও জাগরনি
বাংলা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসবগুলোর মধ্যে একটি হলো লক্ষ্মী পূজা। সাধারণত শারদীয়া দুর্গাপূজার পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজায় গৃহস্থ পরিবারে ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী শ্রী লক্ষ্মীকে আরাধনা করা হয়। এই দিনটিকে ঘিরে সারা বাংলাজুড়ে চলে ধর্মীয় আয়োজন, উপবাস, ও পূজার ব্যস্ততা।
লক্ষ্মী দেবীর পরিচয়
লক্ষ্মী দেবী হলেন হিন্দু ধর্মে ধন, সমৃদ্ধি, সৌভাগ্য এবং শুদ্ধতার প্রতীক। তিনি ভগবান বিষ্ণুর সহধর্মিণী, এবং ‘শ্রী’ নামেও পরিচিত। দেবী লক্ষ্মীর কৃপা পাওয়ার আশায় বহু মানুষ এই পূজায় অংশ নেন এবং বিশ্বাস করেন, ঘরে লক্ষ্মী এলেই ঘরভর্তি হয় শান্তি ও সমৃদ্ধিতে।
পূজার প্রস্তুতি
লক্ষ্মী পূজার দিন সকাল থেকেই ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, দেবী লক্ষ্মী পরিষ্কার ও পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন। মাটি বা মণ্ডা দিয়ে তৈরি হন লক্ষ্মীর প্রতিকৃতি, বা অনেকে মূর্তি ব্যবহার করেন। ঘরে আঁকা হয় আল্পনা, বিশেষত ধানের মোটা চাল ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এই শিল্প। ধূপ, দীপ, ফলমূল, মিষ্টান্ন, এবং চাল-দুধের পায়েস দিয়ে লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
জাগরনি
লক্ষ্মী পূজার রাতে অনেক পরিবারে পালন করা হয় জাগরনি। এই জাগরনি এক ধরনের রাতভর জাগরণ ও ভক্তিমূলক অনুষ্ঠান। পরিবারের সদস্যরা একসাথে বসে কীর্তন গাওয়া, ধর্মীয় গান, শ্রীলক্ষ্মীর কাহিনি পাঠ এবং আলোচনা করে রাত কাটান। অনেক জায়গায় গৃহস্থ বাড়িতে বা পাড়ার মণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। বিশ্বাস করা হয়, জাগরণ করলে লক্ষ্মী দেবীর আশীর্বাদ বেশি পাওয়া যায়।
সমাজে লক্ষ্মী পূজার প্রভাব
এই পূজাটি শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলার গ্রামীণ সমাজে লক্ষ্মী পূজা একটি ঘরোয়া উৎসব হিসেবে পরিচিত, যেখানে পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। এছাড়া, এই পূজা ছোট-বড় সবাইকে একত্রিত করে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
উপসংহার
লক্ষ্মী পূজা ও জাগরনি শুধু একটি ধর্মীয় আচরণ নয়, এটি একটি সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। এই দিনে মানুষ যেমন দেবীর কৃপা লাভের জন্য প্রার্থনা করে, তেমনই একসাথে বসে আনন্দ ভাগ করে নেয়। তাই এই পূজা বাংলার মানুষের মনে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদে সবার জীবন ভরে উঠুক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে — এটাই কাম্য।